ঢাকা,বুধবার, ৮ মে ২০২৪

দেড় কোটি টাকা বিল উত্তোলন বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের আরসিসি ড্রেন খননে সাড়ে তিন কোটি টাকার প্রকল্প লুটপাট

চকরিয়া প্রতিনিধি:::park
কোন ধরণের সরকারি সংস্থার তদারকি ছাড়া সাড়ে তিন কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের নামে লুটপাট চলছে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। এই কাজে কোন ধরণের দরপত্র আহবান করা হয়নি এবং পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়নি। গত বছরের ২০ অক্টোবর গোপনীয়ভাবে ঠিকাদার নামদারী পাঁচ ব্যক্তির একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী অভয়রান্য ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম মওলা ও অফিস সহকারী মো: আরিফ। সরকারের রাজস্ব বিভাগের বরাদ্দকৃত অর্থ সাফারি পার্কের উন্নয়নের নামে লুটপাট করাতে সচেতনমহলে তিব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বিশাল অঙ্কের টাকা লুটপাট করাতে সাফারি পার্ক নিয়ে বর্তমান সরকারের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ও মহতি উদ্যোগে ভেস্তে যেতে চলেছে।
জানা গেছে, ডুলাহাজারস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়নের নামে গত বছরের ২০ অক্টোবর বন্যপ্রাণী অভয়রান্য ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম মওলা পত্রিকায় কোন ধরণের দরপত্র আহবান না করে সম্পূর্ন গোপনীয়ভাবে সাড়ে তিনকোটি টাকার ৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ঠিকাদার নামদারী কিছু ব্যক্তিকে দিয়ে দেয়। পরবর্তীতে তড়িগড়ি করে সম্পূর্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির আশ্রয় নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ওই কাজ গুলো টেন্ডার নাম্বার ৯-১৩ পর্যন্ত বন্যপ্রাণী ২০১৬-১৭ অর্থ বছর (উন্নয়ন ও সম্প্রাসারণ শীর্ষক) প্রথম সংশোধিত প্রকল্পের আওতায় আরসিসি ড্রেন খনন ৫টি, (কোড নং ৭০৮) ও টেন্ডার ১৪ রাস্তা ও কালভার্ট নির্মাণ (কোড নং ৪৯৪১)। নামে মাত্র ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হল, মাজেদুল ইসলাম উজ্জলের মাজেদ কন্ট্রাক্টশন, নাজমুল হক পিয়ারুর ব্রিজবি কন্ট্রাক্টশন, লিটনের তালহা এন্টারপ্রাইজ, শরাফত উল্লাহ বাবুল, রোমেন ও নুর হোসেন সহ ৫জনের একটি সিন্ডিকেট। ইতোমধ্যে কারা ৫০ভাগ কাজ শেষ না করে প্রায় দেড়কোটি টাকা বিল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে। এই সিন্ডিকেটটি বিগত ১৫ বছর ধরে সাফারি পার্কের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে উন্নয়ন কাজের সিংহভাগ টাকা লুটপাট করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সাফারি পার্কের বাউন্ডারি ওয়ালের লাগোয়া আরসিসি ড্রেন খনন, রাস্তা কালর্ভাট নির্মাণে ওই ঠিকাদারী সিন্ডিকেট নিম্মমানের ইট, বালি, পাথর, লোহার রড ও সিমেন্ট ব্যবহার করে সম্পূর্ন দায়সারা ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আরসিসি ড্রেন খননে লোহার রড ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও সেক্ষেত্রে ইটের সুরকির সাথে বালি ও সিমেন্ট মিশ্রিত করে মাটির উপর হাল্কা প্রলেপ দিয়ে যাচ্ছে। এতে করে ড্রেন খনন কাজ শেষ হতে না হতে তা ভেঙ্গে যাচ্ছে। একইভাবে রাস্তা, কালভার্ট নির্মাণেও নিম্মমানের ইট ও বালি ও সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে।
নেই সরকারী কোন তদারকি, নেই ঠিকাদারের উপস্থিতি। নেই সাফারি কর্তৃপক্ষের নজরদারী। কাজ চালাচ্ছেন মেস্ত্রী আর শ্রমিক দিয়ে। ড্রেন নির্মাণে দেখা গেছে মাটির ড্রেন করে কোথাও পলিথিন দিয়ে কোথাও আবার পলিথিন ছাড়াই ঢালাই করছেন। কোথাও কোথাও ঢালাই কাজ ভেসে গেছে অল্প কয়েকদিনের বৃষ্টিতে।
এব্যাপারে সাফারি পার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোর্শেদুল আলম জানান, তিনি এখনো নতুন। সাংবাদিককে বক্তব্য দেয়ার তার কোন এখতিয়ার নাই। কাজের সিডিউল সম্পর্কে জানাতে হলে তাকে আগে জেনে নেয়ার জন্য কয়েকদিন সময় দিতে হবে।
একাধিক সূত্র জানা গেছে, সাফারি পার্কের কাজের অঘোষিত ঠিকাদার ও প্রকৌশলী হল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম মওলা। ঠিকাদার আছে নামে মাত্র। তার ইশারায় চলছে কোটি কোটি টাকার লুটপাট।
সাফারি পার্কের উন্নয়নের নামে ইতিপূর্বে শেষ হওয়া প্রায় বিশ কোটি টাকার কাজের বর্তমানে কোন অস্থিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না।
উপরোক্ত কাজ চলাকালিন সময়ে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় প্রকল্পের মেরামত কাজ আবার কিছু চলতি কাজের অংশে ঢুকিয়ে পুনরায় নির্মাণ চলছে। সর্বোপরি এবারেও চলছে হরিলুট।
এব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্যাপ্রাণী অভায়রন্য ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা গোলাম মওলার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিলো। সেটি আরিফের অফিস ফাইলে থাকবে। সিডিউল মতো কাজ করা হচ্ছে।
এদিকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের বন সংরক্ষক জাহিদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, যদি সাফারি পার্কের দরপত্র বিহীন উন্নয়ন কাজ হয় এবং সেখানে কোন ধরণের অনিয়ম ও দূর্নীতি হয় তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাফারি পার্ক এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, পার্কের উন্নয়নের নামে সরকারের বিশাল অঙ্কের টাকা গুটি কয়েক ব্যক্তি করবে তা মেনে নেয়া যায় না। তারা অতি সত্বর দুদকের তদন্তের দাবী করেন। ##

পাঠকের মতামত: